আমরা আজ ” ট্রেডিশনাল মার্কেটিং কি এবং কিভাবে করব “
নিয়ে আলোচনা করব 👉
Traditional meaning ঐতিহ্য , এখানে ট্রেডিশনাল মার্কেটিং বলতে যখন থেকে মার্কেটিং এর যাত্রা শুরু হয়েছিল ঠিক তখন থেকে আধুনিক বা ডিজিটাল মার্কেটিং এর চর্চা শুরু হওয়া পর্যন্ত যে মাধ্যমে মার্কেটিং করা হতো তাকে বুঝায়। মূলত মার্কেটিং এর প্রাচীন মাধ্যম এটা।
ডিজিটাল মার্কেটিং আসার ফলে ট্রেডিশনাল মার্কেটিং এর ব্যাবহার কিছুটা কমে গিয়েছে। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ট্রাডিশনাল মার্কেটিং এর চাহিদা ব্যাপক রয়েছে।
ট্রেডিশনাল মার্কেটিং কি এবং কিভাবে করব তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
মার্কেটিং এর ইতিহাস ( History of marketing)
ধারণা করা হয় মার্কেটিং এর শুরুটা ১৫০০ বি সি ই (Before common era / সাধারণ যুগের আগে) থেকে হয়েছে। সেটা একদম নির্দিষ্ট করে বলা সম্ভব না। তবে বেশ কিছু মার্কেটিং পদ্ধতি কবে থেকে শুরু হয়েছে সেটা বলা সম্ভব। নিচে সেগুলো নিয়ে আলোচনা করা হল:-
1. লোগো ব্যাবহার (Logo uses) – বিভিন্ন ম্যাগাজিন বা আর্টিকেল থেকে জানা যায় ১৫০০ BCE(Before common era / সাধারণ যুগের আগে) থেকে প্রোডাক্টের গায়ে লোগো বা সিগ্নেচার ব্যাবহার শুরু হয়।
2. প্রিন্টিং প্রেস বিজ্ঞাপন (Printing press advertising) – ১৪৫০এর দশকে প্রথম প্রিন্টিং বিজ্ঞাপন প্রচার করা হয়। যা কিনা তখন ব্যাপক সাড়া ফেলে।
3. ম্যাগাজিনে বিজ্ঞাপন (Magazine advertising) – সর্বপ্রথম ১৭৪২ সালে বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিনের ম্যাগাজিনে বিজ্ঞাপন প্রচার করা হয়।
4. বিলবোর্ড (Billboard advertising) – সর্বপ্রথম ১৮৬৭ সালে বিলবোর্ডের মাধ্যমে বিজ্ঞাপন প্রচার করা হয়।
5. রেডিও এড (Radio advertising) – সর্বপ্রথম ১৯২২ সালে রেডিওতে ১০মিনিটের একটি পেইড এড দেওয়া হয়।
6. টেলিভিশন এড (Television advertising) – ১৯৪১ সালের ১লা জুলাই প্রথম কমার্শিয়াল এড প্রচার করে বলে জানা যায়।
এর পর থেকে যুগের সাথে তাল মিলিয়ে নতুন নতুন মার্কেটিং আইডিয়া উদ্ভাবন হতে থাকে।
ট্রেডিশনাল মার্কেটিং কি? (What is traditional marketing)
মার্কেটিং বলতে (concept of marketing) আমরা বুঝি কোন পণ্য বা প্রতিষ্ঠানের প্রচার। আর এই প্রচারণার অন্যতম প্রাচীন মাধ্যম হল ট্রেডিশনাল মার্কেটিং (traditional marketing)।
ট্রেডিশনাল মার্কেটিং (traditional marketing) পদ্ধতি মার্কেটিং জগতে একটি বহুল ব্যবহৃত মাধ্যম। সাধারণত ট্রেডিশনাল মার্কেটিং বলতে সচরাচর যেই মাধ্যমে মার্কেটিং করা হয় তা বোঝায়।
যেমন :- বিলবোর্ড, ব্যানার, পোস্টার, মাইকিং টেলিভিশন এড, রেডিও এড ইত্যাদি। সারা বিশ্বে এখনো এর ব্যাপক ব্যবহার রয়েছে।
ট্রেডিশনাল মার্কেটিং এর পাশাপাশি ডিজিটাল মার্কেটিং করে থাকে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। তবে বর্তমানে ট্রেডিশনাল মার্কেটিং এর চাহিদা বিশ্বব্যাপী কিছুটা কমে গিয়েছে। সকলে ডিজিটাল মার্কেটিং এর দিকে ঝুকছে।
অতীতে মার্কেটিং কিভাবে করা হতো?
অতীতে মার্কেটিং করার খুব বেশি একটা মাধ্যম ছিল না। হাতে গোনা অল্প কিছু উপায়ে মার্কেটিং চালানো হতো। যেমন :
1. পোস্টার(Poster advertising) – ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের পণ্য বা প্রতিষ্ঠানের জন্য আকর্ষনীয় পোস্টার ডিজাইন করে বিভিন্ন জায়গায় লাগিয়ে তাদের মার্কেটিং করত।
2. ব্যানার (Banner advertising)- পণ্য বা প্রতিষ্ঠানের জন্য বড় বড় ব্যানার ডিজাইন করে বিভিন্ন জায়গায় লাগিয়ে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের মার্কেটিং করত।
3. বিলবোর্ড (Billboard advertising) – আমরা রাস্তার পাশে বিভিন্ন পণ্যের নামে বড় বড় বিলবোর্ড দেখি। এটা একটা মার্কেটিং এর জনপ্রিয় মাধ্যম।
4. মাইকিং – মাইকিং এর মাধ্যমে পাড়া মহল্লায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাদের পণ্যের প্রচার করত। বর্তমানে এর ব্যাবহার কিছুটা কমে গিয়েছে।
5. পত্রিকায় বিজ্ঞাপন (News paper advertising) – বিভিন্ন পত্রিকায় পণ্য বা প্রতিষ্ঠানের ছবি দিয়ে মার্কেটিং করা হত।
6. টেলিভিশনে বিজ্ঞাপন (Television advertising) – টেলিভিশনে ছোট ভিডিওর মাধ্যমে মার্কেটিং করাটা মার্কেটিং এর একটা জনপ্রিয় মাধ্যম।
7. ডোর টু ডোর (Door to door) – এ মাধ্যমে গ্রাহকদের সরাসরি বাড়িতে যেয়ে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের পণ্য সম্পর্কে ধারণা দিত।
8. রেডিও বিজ্ঞাপন (Radio advertising) – রেডিওতে অডিও সাউন্ডের মাধ্যমে বিজ্ঞাপন প্রচার করা যায়।
উপরে দেওয়া পদ্ধতিগুলো ছাড়াও আরও অনেক মার্কেটিং টিপস (Marketing tips) আছে যার মাধ্যমে ট্রেডিশনাল মার্কেটিং চালানো হতো। এতক্ষন আমরা জানলাম ট্রেডিশনাল মার্কেটিং কি এবং কিভাবে করব। এখন আমরা জন্য বর্তমানে এর গুরুত্ব কেমন।
ট্র্যাডিশনাল মার্কেটিং ও ডিজিটাল মার্কেটিং এর পার্থক্য কি?(digital marketing vs traditional marketing)
ট্রেডিশনাল মার্কেটিং একটি আদিম মাধ্যম এবং ডিজিটাল মার্কেটিং একটি নতুন মাধ্যম। এখনো ডিজিটাল মার্কেটিং এর ব্যাপক বিস্তার হয়নি। কিন্তু ভবিষ্যতে এর ব্যাপক বিস্তার হবে এবং ট্রেডিশনাল মার্কেটিং এর ব্যবহার কমে আসবে।
ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের মার্কেটিং করে তাদের প্রচার এবং বিক্রয় (Marketing and sales) বৃদ্ধি করার জন্য। ট্রেডিশনাল মার্কেটিং করে Sales বৃদ্ধি হলেও সেটা সঠিকভাবে গণণা করা খুব কঠিন।
ট্রেডিশনাল মার্কেটিং এ Marketing plan বা Marketing strategy সাজাতে সময় এবং খরচের পরিমাণ বেশি লাগে। যেটা ডিজিটাল মার্কেটিং এর ক্ষেত্রে অনেকটা সহজ।
নিচে ট্রেডিশনাল মার্কেটিং এবং ডিজিটাল মার্কেটিং এর পার্থক্য দেখানো হয়েছে :-
ট্রেডিশনাল মার্কেটিং
- ট্রেডিশনাল মার্কেটিং পদ্ধতিতে কাস্টমারকে টার্গেট করে বিজ্ঞাপন প্রচার করা যায় না। যার ফলে বিজ্ঞাপন বা ক্যাম্পেইন থেকে আশানুরুপ কোন ফলাফল পাওয়া যায় না।
- ট্রেডিশনাল মার্কেটিং পদ্ধতির সব থেকে বড় সমস্যা হল ব্যয়বহুলতা। এ পদ্ধতিতে মার্কেটিং করতে অনেক টাকা ব্যয় হয়।
- ট্রেডিশনাল মার্কেটিং একটি সময় সাপেক্ষ মার্কেটিং মাধ্যম। এই মাধ্যমে মার্কেটিং করতে অনেক সময়ের প্রয়োজন হয়।
- ট্রেডিশনাল মার্কেটিং এ ক্যাম্পেইন থেকে নির্দিষ্ট ডাটা বের করা যায় না। এখানে আপনার বিজ্ঞাপন দেখে কতজন কাস্টমার পেয়েছেন সেটা বোঝা যায় না।
- ট্রেডিশনাল মার্কেটিং করতে জনবল প্রয়োজন হয় অনেক। সেক্ষেত্রে এখানে একটা বড় ধরনের খরচ হয়ে থাকে।
ডিজিটাল মার্কেটিং
- অডিয়েন্স টার্গেট(Audience target) :- ডিজিটাল মার্কেটিং এর সবথেকে ভালো দিক হলো এখানে আপনি কাস্টমার টার্গেট করে বিজ্ঞাপন প্রচার করতে পারবেন। যার ফলে আপনার পন্য কিনতে যারা আগ্রহী শুধু তারাই আপনার বিজ্ঞাপন দেখবে।
- সল্প ব্যয় (Low cost) :- ডিজিটাল মার্কেটিং এর মাধ্যমে খুব অল্প খরচে অধিক গ্রাহকের কাছে বিজ্ঞাপন পৌছানো যায়।
- টার্গেট লোকেশন (Target Location) :- আপনি আপনার বিজ্ঞাপন প্রচার করার পূর্বে লোকেশন টার্গেট করে দিতে পারবেন। শুধুমাত্র ওই জায়গা গুলোতে আপনার বিজ্ঞাপন পৌছাবে।
- কাস্টমারকে রি-টার্গেট করা (Re-target customer) :- এখানে আপনি আপনার পূর্বের মার্কেটিং ক্যাম্পেইন থেকে প্রাপ্ত কাস্টমারদের ডাটা সংগ্রহ করে পরবর্তী সকল মার্কেটিং ক্যাম্পেইনে কাজে লাগাতে পারবেন। এতে করে আপনার সেল বৃদ্ধি পাবে।
- ক্যাম্পেইনের বাজেট নির্ধারণ (Campaign budget) :- ডিজিটাল মার্কেটিংয়ে আপনি আপনার ইচ্ছামত বাজেট নির্ধারণ করে বিজ্ঞাপন প্রচার করতে পারবেন। এখানে নির্দিষ্ট কোন বাজেট থাকে না।
- মার্কেটিং স্ট্রাটেজি (Marketing strategy) :- এখানে আপনি খুব সহজে মার্কেট এনালাইসিস করে আপনার Marketing strategy সাজাতে পারবেন।
- কম্পিটিটর এনালাইসিস (Competitor analysis) :- ডিজিটাল মার্কেটিং এর মাধ্যমে আপনি আপনার কম্পিটিটরদের এনালাইসিস করতে পারবেন। সেই রিপোর্টে এর উপর ডিপেন্ড করে আপনি আপনার Marketing plan সেটাপ করতে পারবেন।
ডিজিটাল মার্কেটিং কি ট্রেডিশনাল মার্কেটিং এর চেয়ে জনপ্রিয়?
আমরা উপরে দেখেছি ট্রেডিশনাল মার্কেটিং কি এবং কিভাবে করব। analytics ট্রেডিশনাল মার্কেটিং দিয়ে আসলে মার্কেটিং এর যাত্রা শুরু হয়। কিন্তু এই মাধ্যমে অর্থ এবং সময় দুটোই অনেক বেশি লাগে।কিন্তু ডিজিটাল মার্কেটিং এর ক্ষেত্রে তার ঠিক উল্টোটা।
ডিজিটাল মার্কেটিং ব্যাবহার করে আপনি সল্প সময়ে এবং সল্প খরচে অধিক মানুষের কাছে আপনার পন্যের বিজ্ঞাপন প্রচার করতে পারবেন। এবং যা কিনা আপনি নিজে পর্যবেক্ষন করতে পারবেন। এছাড়াও আরও অনেক ধরনের সুবিধা আছে ডিজিটাল মার্কেটিং এর । সেজন্য ট্রেডিশনাল মার্কেটিং এর ব্যাবহার দিন দিন কমে এসেছে এবং ডিজিটাল মার্কেটিং এর চাহিদা বাড়ছে।
পরিশেষে
ট্রেডিশনাল মার্কেটিং কি এবং কিভাবে করব নিয়ে আলোচনা করতে যেয়ে আমরা মোটামুটি বুঝতে পেরেছি যে ট্রেডিশনাল মার্কেটিং একটি প্রাচীন মাধ্যম। যার ব্যাবহার দিন দিন কমে আসছে।
বর্তমানে ডিজিটাল মার্কেটিং এর চাহিদা এতটাই বেড়েছে যে সারাবিশ্বের অধিকাংশ ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান এই পথে অগ্রসর হচ্ছে। হয়ত ট্রেডিশনাল মার্কেটিং কখনো হারিয়ে যাবে না তবে এর ব্যাবহার অনেকটাই কমে যাবে ভবিষ্যতে।
ট্রেডিশনাল মার্কেটিং কি ?
পুরনো পদ্ধতি যেমন: পোস্টার, ব্যানার, রেডিও, টেলিভিশন ইত্যাদির মাধ্যমে প্রচারণা চালানোকে এক কথায় ট্রেডিশনাল মার্কেটিং বলে। ট্রেডিশনাল মার্কেটিং এর ধারণা অনেক পুরনো হলেও এখনও কিছু দেশে এর প্রচলন রয়েছে।
ট্রেডিশনাল মার্কেটিং কিভাবে করব?
এর জন্য প্রথমে আপনার টার্গেটেড অডিয়েন্স অর্থাৎ যারা অফলাইন এর উপর নির্ভরশীল তাদের পছন্দের বিষয়টি ভাবতে হবে। এরপর মার্কেটিং এর মাধ্যমে প্রচারণা চালিয়ে আপনার নির্দিষ্ট পণ্যটি সম্পর্কে জানাতে হবে এতে তারা পণ্যটি কিনতে আগ্রহী হয়।
ডিজিটাল মার্কেটিং কি ট্রেডিশনাল মার্কেটিং এর চেয়ে জনপ্রিয়?
হ্যা, ডিজিটাল মার্কেটিং বর্তমান যুগে ট্রেডিশনাল এর চেয়ে অধিক জনপ্রিয়। ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্র পরিসর ডিজিটাল মার্কেটিং এর উপর নির্ভরশীল। আর এটির মাধ্যমে খুব সহজেই পরিমিত সাফল্য অর্জন করা যায়।